Our Story
সময় রাঙানোর ২৯ বছর
তিন দশকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের শীর্ষসারির ফ্যাশন ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশ। ২০ ডিসেম্বর এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আমরা সময়কে রাঙিয়ে তুলি —স্লোগানে স্বপ্নময় এই উদ্যোগের সূচনা ১৯৯৪ সালের নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার সান্তনা মার্কেটের ছোট্ট পরিসরে। এরপর সময় প্রবাহে অতিবাহিত ২৯ বছর। বাংলাদেশের ফ্যাশন অনুরাগীদের ভালোবাসায় ছড়িয়েছে দেশে—বিদেশের নানা প্রান্তে।
ফিরে দেখা
নব্বই দশকের শুরুতেই চার বন্ধু মিলে টুকটাক কাজ করতে করতেই পরিকল্পনা। সেই ভাবনার সোপান ধরেই ফ্যাশন হাউজ রঙ—এর শুরু ১৯৯৪ সালে। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার সান্তনা মার্কেটের ছোট্ট পরিসরে। দেশের ফ্যাশনপ্রিয় মানুষের ভালোবাসায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের অন্যত্রও শাখা বিস্তার হয়। এই জয়যাত্রায় ধীরে ধীরে অনন্য ব্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পায় রঙ। শুরুর সময় হতে এখন পর্যন্তআমাদের সুহৃদ—স্বজন—শুভানুধ্যায়ী, নানান মাধ্যমের শিল্পী, তাঁতশিল্পী, মিডিয়াকর্মীসহ সকলের আকুন্ঠ সমর্থন পেয়েছি আমরা, কৃতজ্ঞতা সবসময়ের। বয়ে যাওয়া সময়ে রঙের কান্ডারি চার থেকে হয়ে যায় দুই। বাকি দুজন এগিয়ে নিতে থাকে রঙ—কে। ফ্যাশনশিল্পে দেশী উৎসবগুলোর গুরুত্ব নাগরিক জীবনে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত করতে যে প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ্য ভূমিকা রেখেছে তার অন্যতম পথিকৃত রঙ। নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক সামগ্রীর নানান প্রদর্শনী আয়োজনের পাশাপাশি ২০১০ সালে রঙধনু শিরোনামে অনন্য প্রদর্শনী আয়োজন করে বিপুল সুনাম করেছিল রঙ।
রঙ থেকে রঙ বাংলাদেশ
পরিস্থিতিকে মেনে নিতেই এক সময় ‘রঙ’ হয়েছে ‘রঙ বাংলাদেশ’। ঠিক আট বছর আগে। ২০১৫ সালে। ছন্দপতনের বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে, সূচনাদিনের প্রত্যয়েই রঙ বাংলাদেশ এগিয়েছে। অবশ্য সেটা সম্ভব হয়েছে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা রঙ অনুরাগীদের সমর্থন আর পৃষ্ঠপোষণার জন্য। চলমানতায় আঙ্গিক পরিবর্তন সত্বেও লক্ষ্যে অবিচল থেকে প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাসের সঙ্গে এক ঝাঁক নিবেদিত প্রাণ কর্মীর নিরলস প্রচেষ্টায় নতুন করে বিকশিত হয়েছে রঙ বাংলাদেশ। অপরিসীম উৎসাহ, উদ্দীপনার সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা নিয়ে এগিয়েছে রঙ বাংলাদেশ। সময়ের সঙ্গে আরো বড় হয়েছে রঙ বাংলাদেশ পরিবার। ফ্যাশন অনুরাগীদের ভালোবাসায় শাখা ছড়িয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। রঙ বাংলাদেশ—এর একটি শক্তিশালী টিম, ফ্যাশনের এই কর্মযজ্ঞকে এগিয়ে নিচ্ছে। দেশীয় ফ্যাশন শিল্পের অন্যতম এই ব্র্যান্ড ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেছে। ফলে রঙ বাংলাদেশ—এর অনুরাগীরা হাতের নাগালেই পাচ্ছেন প্রিয় ব্র্যান্ডের পোশাক ও উপহারসামগ্রী। সমান্তরালে ডিজিটাল উৎকর্ষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গড়ে উঠেছে রঙ বাংলাদেশের অনলাইন প্লাটফর্ম, নিজস্ব ই—কর্মাস সাইট ও ফেসবুকসহ নানান সামাজিক মাধ্যম। ফলে দেশে—বিদেশের ক্রেতারা সহজেই জানতে পারছেন এই দেশীয় ব্র্যান্ডের সকল নান্দনিক সৃষ্টি, কিনতেও পারছেন সকল সামগ্রী বাসায় বসেই।
রঙ বাংলাদেশ এর সাব—ব্র্যান্ড
রঙ বাংলাদেশ বিভিন্ন বয়সের জন্য সমান সচেতন। সেজন্যই মূল ব্র্যান্ডের অধীনেই রয়েছে ৪টি পৃথক সাব—ব্র্যান্ড। জ্যেষ্ঠদেরজন্য ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’, তরুণদের জন্য ‘ওয়েস্টরঙ’, ছোটদের জন্য ‘রঙ জুনিয়র’ আর বাংলাদেশকে দেশ এবং দেশের বাইরে পরিচিত করাতে আছে ‘আমার বাংলাদেশ’। শেষের এই ব্র্যান্ডটি মূল উপহার সামগ্রী বা স্মারক উপহারের; যাতে করে এর মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় এক টুকরো বাংলাদেশ।
সৃজনে থিম নির্ভরতা
সকল দেশীয় উৎসবে থিমভিত্তিক সামগ্রী তৈরীর অনন্য ধারণা প্রচলনে পথপ্রদর্শক এই প্রতিষ্ঠান। রঙ বাংলাদেশ বরবারই থিম নির্ভর কাজ করে থাকে; তা সে উৎসবই হোক বা উপলক্ষ্য। সেই ধারা অব্যাহত রেখেই এগিয়ে চলেছে। ২০১৫ হতে ইতিমধ্যে হায়া সোফিয়া মসজিদ,ইন্দোনেশিয়ান বাটিক, কাঠখোদাই নকশা ,বাংলার এতিহ্যবাহী গয়না, শিল্পী যামিনী রায়ের চিত্রকলা, নকশি কাঁথা,ইবান টেক্সটাইল,আফ্রিকান মাড হাউজ , ইসলামিক নকশা, শিল্পী কামরুল হাসানের চিত্রকলা, সন্দেশের ছাঁচ, জ্যামিতিক নকশা, ইসলামিক নকশা, ফেস্নারাল মোটিফ, শীতল পাটি, সাঁওতালদের দেয়ালচিত্র, মঙ্গল শোভাযাত্রা, ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল, চাকমা সম্প্রদায়ের আলাম, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী’র রেখাচিত্র, মান্ডালা, ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল, রাজস্থানী ডিজাইন, মোঘল আর্ট, কাতান, টাইলস, শতরঞ্জি, মধুবনী, সুজনী সেলাই, মান্ডালা, আলপনা, কলমকারী, কার্পেট, ট্রাক আর্ট, অরিয়েন্টাল রাগ, পূজার ফুল, পাখির রঙ থিম নিয়ে প্রোডাক্ট লাইন তৈরী করেছে রঙ বাংলাদেশ।
ভবিষ্যতের ভাবনা
২৯ বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতাকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্টি্রতে রঙ বাংলাদেশ সুদৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ইতিমধ্যে রঙ বাংলাদেশ দূর্দান্ত টিমওয়ার্কে সৃজনশীল ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি জয় করেছে শুভানুধ্যায়ীদের আস্থা। ভবিষ্যতেও দেশজ উপকরণ, উজ্জ্বল রঙ আর বিষয়ভিত্তিক নকশা বিন্যাসের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পোশাকে ধরে রাখায় চেষ্টায় ত্রুটি থাকবে না; বরং রঙ বাংলাদেশ এর পণ্যকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পাশাপাশি টেকসই ফ্যাশন ও পুণর্ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়েই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়াসী। সময় আমরা রাঙিয়ে চলেছি সূচনা—প্রতিশ্রম্নতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে। রঙ বাংলাদেশ একান্তভাবে বিশ্বাস করে যাদের নিয়ে এবং যাদের জন্য এই সৃষ্টিযজ্ঞ, তারা সবসময়ের মতোই সাথী হবেন। সবসময়ে তাদের যে সমর্থন মিলেছে তাতে রঙ বাংলাদেশ অভিভূত ও কৃতজ্ঞ। অতএব সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই টিকে থাকবে রঙ বাংলাদেশ—এর লেগাসি।