Our Story
নব্বই দশকের শুরু। তখন আমরা চার। উদ্ভিন্ন তারুণ্যের দূরন্ত সেসব দিন। আমি ও বিপ্লব চারুকলায়। মামুন ও বাবু ডিগ্রী পড়ছে। চারজনে মিলে টুকটাক কাজ করি। পরিচিতদের বিয়ে, গায়ে হলুদের জন্য সাজানো। এসব করতে করতে ১৯৯৪ সালে শুরু হয় রঙ। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার শান্তনা মার্কেটের ছোট্ট পরিসরে। নানা টানাপোড়েনে চলতে থাকে আমাদের অভিযাত্রা। এরই মাঝে একে একে দুই বন্ধু মামুন ও বাবু বিদেশে পাড়ি জমায়। থেকে যাই আমি ও বিপ্লব। তবে আমরা কেউই রঙ ছাড়িনি। বরং দুজনে মিলে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। বিপ্লব সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। অন্যদিকে আমি সামলেছি ডিফেন্স। সবসময় নেপথ্যের মানুষ হিসাবে রঙ-এর অগ্রযাত্রাকে সুগম করার চেষ্টা করেছি। একটা সময় পর্যন্ত রঙ মানেই ছিল নারায়নগঞ্জের রঙ। সেসময় রঙ-এর সবেচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা ছিল শাড়ির। আমরা বলতামও বটে রঙ-এর শাড়ি কিনতে হলে নারায়ণগঞ্জ আসতে হবে। এভাবেই চলছিল। তারপর রঙ নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকায় পা রাখে। আস্তে আস্তে শাখা ছড়াতে থাকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের অন্যত্রও। কিন্তু ২১ বছর পার করে এসে এমন করে আকস্মিকভাবে তাল কাটবে তা কে জানত। মাস কয়েক আগে বিপ্লবই এই প্রস্তাব দিয়ে একলা পথচলার সিদ্ধান্ত নেয়। তেমন কোন কারণ ছাড়াই। আমার মনে হয়েছিল এটা ওর কোন অভিমানী চিন্তা। পরে ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু সেটা আর হয়নি, ফাটল জোড়া লাগেনি। ফলে নতুন পথচলা শুরু করতে হয়েছে আমাকে। এই ব্যবসায় কোনদিন আসব সেটাই তো ভাবিনি, আজ সেই ব্যবসাকেই এখন থেকে একা টেনে নিয়ে যেতে হচ্ছে। অবশ্য একাই বা বলি কেন ? আমার সঙ্গে রয়েছে একটি দল, যারা সবাই এই প্রতিষ্ঠানের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। অতএব এখন থেকে সেই আগের রঙ নয়। ২১ বছর পর দ্বিবিভক্ত রঙ-এর একটা অংশ রঙ বাংলাদেশ। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট এর সবগুলো দেশীদশেই থাকছে রঙ বাংলাদেশ। আমাদের আরো পাওয়া যাবে সীমান্ত স্কয়ার, নারায়ণগঞ্জ ডিআইটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোড, মোহাম্মদপুর, ব্রাম্মণবাড়িয়া, ফেনী ও ময়মনসিংহ এ। আমাদের মাদার ব্র্যান্ড অবশ্যই রঙ বাংলাদেশ। এর সঙ্গে আরো রয়েছে তিনটি সাবব্র্যান্ড। ওয়েস্ট রঙ, শ্রদ্ধাঞ্জলি ও আমার বাংলাদেশ। আমাদের সব ব্র্যান্ডের প্রডাক্টই শতভাগ দেশজ। আমরা দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।
রঙ বাংলাদেশ
এটাই আমাদের মাদার ব্র্যান্ড। মূল রঙ দ্বিখন্ডিত হয়ে যাওয়ায় আমার অংশটিকে রিব্র্যান্ডিং করা হয়েছে রঙ বাংলাদেশ নামে। তবে যে লক্ষ্য নিয়ে রঙ-এর যাত্রা শুরু হয়ে অব্যাহত ছিল ২১ বছর সেই লক্ষ্যেই অবিচল থাকবে রঙ বাংলাদেশ। আমরা এখনও সময়কে রাঙাতে চাই। রাঙাতে চাই দেশের ফ্যাশনপ্রিয়দের দেশজ পণ্যে, উজ্জ্বল এবং হৃদয়গ্রাহী বর্ণবিণ্যাসে। আমাদের সংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে।
ওয়েস্ট রঙ
তরুণ প্রজন্মের পছন্দকে মাথায় রেখে বেশ কয়েক বছর আগে পশ্চিমা ফ্যাশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পোশাক এবং অন্যান্য ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্যের সম্ভার নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল ওয়েস্ট রঙ-এর। বর্তমানে এই ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশ-এর একটি সাব ব্র্যান্ড হিসাবে থাকছে। এখনও ওয়েস্ট রঙ হৃদয়ে তরুণ এবং বয়সে তরুণ- উভয় শ্রেণির ক্রেতার সন্তুষ্টি বিধানে চেষ্টা করবে আধুনিক ও ট্রেন্ডি পোশাক ও অন্যান্য পণ্যে।
শ্রদ্ধাঞ্জলি
পরিবারের, সমাজের শ্রদ্ধাস্পদদের জন্য নিবেদিত রঙ বাংলাদেশ-এর এই সাবব্র্যান্ডটি। এখানে মূল লক্ষ্য বাণিজ্য নয় বরং বরিষ্ঠদের সেবা প্রদান। তাদের উপযোগী রঙ, আরাম এবং মর্যাদাকে মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হবে প্রতিটি পণ্য। এটা পুরোপুরিই হবে বয়োজ্যেষ্ঠদের আপন ভুবন। তারা এখানে একেবারেই নিজেদের জন্য পণ্য খুঁজে নিতে পারবেন।
আমার বাংলাদেশ
বিশ্বজুড়েই নিজের দেশকে উপস্থাপনের প্রয়াস থাকে। এটা বিশেষত হয়ে স্মারক উপহার বা সুভেনিরের মাধ্যমে। বাংলাদেশে বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না। রঙ বাংলাদেশ বিষয়টি যথেস্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আলাদা একটি প্রডাক্ট লাইন করছে আমার বাংলাদেশ সাব ব্র্যান্ডের অধীনে। প্রতিটি আউটলেটেই আলাদা কর্ণার থাকবে আমার বাংলাদেশ-এর। আমাদের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে সচেতনভাবে ব্র্যান্ডিং করা। বাংলাদেশের পণ্যকে দেশি এবং বিদেশী ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরা। এজন্য থাকছে আলাদা প্রডাক্ট ভাবনা, নকশা ও তার বাস্তবায়ন। আশা করি আমাদের এই ভাবনা ক্রেতাদের ভালো লাগাকে স্পর্শ করতে পারবে। নতুন বছরে রঙ বাংলাদেশ সঙ্গে আরো তিন টি সাব ব্র্যান্ড নিয়ে শুরু করছে পৃথক এবং পূর্ণাঙ্গ একটি ফ্যাশন হাউজ হিসাবে একলা চলো’র অভিযাত্রা। পুরনো অভিজ্ঞতাকে নতুন আলোয় উপস্থাপন করাটাই মূল লক্ষ্য। বরাবরের মতো আমার ছুঁতে চাই ভোক্তাদের পছন্দ, পেতে চাই তাঁদের সমর্থন। নতুন ব্রান্ডিং, নতুন অভিযাত্রা, সঙ্গে আপনারা সবসময়ের জন্য রয়েছেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে।